Share this post:
আমাদের অনেকের ধারনা যে কোন সেবা বা সার্ভিস ডিজিটাল করলেই সেটা অনেক সহজ ও টেকসই হবে। আসলে তা নয়। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে যে কাজটি করা হয় সে কাজটি কম্পিউটারে সফটওয়্যারের মাধ্যমে করা হলেও সেটি যে সহজ বা টেকসই হবে এ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা যায় না। আজকের পোস্টে সেবা ডিজিটালাইজেশন বনাম সেবা সহজীকরণ বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান সার্ভিস ডিজিটালাইজেশন এর কাজ করছে, আশা করি তাদের কিছুটা হলেও উপকারে আসবে। যা আলোচনা করা হয়েছে:
ডিজিটালাইজেশন কী? What is Digitalization?
সহজ কথায় ডিজিটালেইজেশন হচ্ছে তথ্যকে ডিজিটাল ফরমেটে রুপান্তর করা। প্রচলিত একটি ম্যানুয়াল পদ্ধতিকে ডিজিটাল উপায়ে সম্পাদনের গৃহীত ব্যবস্থাকেই ডিজিটালাইজেশন বলা যায়। উদাহরণ স্বরূপ, আপনার একটি নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রয়োজন। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হয়তো আপনাকে সংশ্লিষ্ট অফিসে উপস্থিত হয়ে আবেদন করার জন্য আবেদনের নির্ধারিত ফরমেটটি সংগ্রহ করতে হবে। আবেদন ফরমটি পূরণ করে জমা প্রদান করতে হবে। সিম্পল এই ধাপটি ডিজিটালাইজড করা হলে আপনি হয়তো ঘরে বসেই আবেদন ফরমটি ডাউনলোড এবং পূরণ করে আপলোড অথবা সরাসরি ওয়েবসাইটে আবেদন করতে পারবেন।
Digitalization এর প্রকারভেদ
ডিজিটাল টেকনোলজি এর ব্যবহারের ভিত্তিতে ডিজিটালাইজেশনকে আমরা নিম্নোক্তভাবে ভাগ করতে পারি-
- ডকুমেন্ট ডিজিটালাইজেশন- পেপার ডকুমেন্ট যেমন বই, নথি ইত্যাদি স্ক্যান করে ডিজিটাল ফরমেটে সংরক্ষণ করা। এখানে স্টোরেজ এর প্রয়োজন হবে।
- ডাটা ডিজিটালাইজেশন- প্রচলিত নিয়মে যে সমস্ত ডাটা রেজিষ্টারের মাধ্যমে লিখিত আকারে সংরক্ষণ করা হয় সেগুলো কে সার্ভারে ডাটাবেসে রূপান্তর করা।
- সার্ভিস ডিজিটালাইজেশন- যে কোন নাগরিক সেবা, ব্যাংকিং সেবা, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি সেবা প্রদানের পদ্ধতিকে ইন্টারনেট, সফটওয়্যার ইত্যাদি টেকনোলজি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রদানের ব্যবস্থা করা।
- ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন- একটি প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কর্মকান্ড ডিজিটাল টেকনোলজি প্রয়োগের মাধ্যমে ম্যানুয়াল প্রসেসকে ডিজিটালাইজড করা। এখানে সমস্ত অপারেশন সার্ভার বেজড এককেন্দ্রিয়করণের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়।
সেবা সহজীকরণ বা Service Process Simplification কী?
সহজ কথায় Service Process Simplification হচ্ছে সেবা বা সার্ভিস প্রদানের বিদ্যমান পদ্ধতিকে পুন:মূল্যায়নের মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় ধাপসমূহ বাদ দিয়ে নতুনভাবে ডিজাইন করা। সেবা সহজীকরণের মাধ্যমে একটি সেবা প্রদানের পদ্ধতিকে সাশ্রয়ী, অধিকতর কার্যকরী এবং গ্রাহক বান্ধব করা হয়।
সেবা সহজীকরণ বা Service Process Simplification এর উপায় বা পদ্ধতি
- বর্তমান পদ্ধতি যাচাই-বাছাই এবং মূল্যায়নপূর্বক প্রসেস ম্যাপ তৈরী করা।
- যে সমস্ত ধাপ একাধিকবার করা হচেছ সে সমস্ত ধাপসমূহ বাদ দেয়া।
- যে সমস্ত ধাপ অপ্রয়োজনীয় সে সমস্ত ধাপসমূহ বাদ দেয়া।
- প্রযোজ্য ধাপ অটোমেট করা
- কাজসমূহ অর্গানাইজ করে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করা।
- প্রস্তাবিত সিম্প্লিফাইড প্রসেস ম্যাপ বাস্তবায়ন, মনিটর এবং প্রয়োজনে অপটিমাইজ করা।
ডিজিটালাইজেশন বনাম সেবা সহজীকরণ
সেবা প্রদানের পদ্ধতিকে সহজীকরণ না করে শুধুমাত্র ডিজিটালাইজড করলে সে ডিজিটালাইজড সার্ভিসটি মোটেই কার্যকরী হবে না। বরং সে ডিজিটালাইজড সার্ভিসটি শীঘ্রই বন্ধ হয়ে যাবে। ধরা যাক, একটি নাগরিক সেবা প্রদানের পদ্ধতিকে সহজীকরণ ব্যতিরেকে ডিজিটালাইজড করা হলো। প্রচলিত পদ্ধতিতে নাগরিক সেবাটি প্রদানের জন্য হয়তো ২০ টি ধাপ সম্পাদন করতে হয়। এই ২০ টি ধাপকেই ডিজিটালাইজড করা হলো। এক টেবিল থেকে তার কাজটি সম্পাদন করে সফটওয়্যার এর মাধ্যমে পরের জনের কাছে পাঠালো। এভাবে পর্যায়ক্রমে সকল টেবিল ঘুরে আসতে প্রকৃত পক্ষে পূর্বের পদ্ধতি থেকে এ রকম ডিজিটালাইজড পদ্ধতিতে আরোও বেশী সময়ের প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নাগরিক সেবা প্রদান কারী দপ্তরসমূহে কম্পিউটার ব্যবহারে সবাই দক্ষ নয়। সে হিসেবে এখানে আরোও বেশী সময়ের প্রয়োজন হবে। তাই সেবা সহজীকরণ না করে শুধুমাত্র ডিজিটালাইজড করলে সেবা প্রদানের পদ্ধতিটিকে আরোও জটিল করে তোলা হবে। অনেকটা ট্যাবলেট খাইয়ে গরু মোটা তাজাকরণের ন্যায় হবে।
অপরদিকে সেবা সহজীকরণের জন্য সবসময় ডিজিটাল টেকনোলজীর ব্যবহার করতে হবে বিষয়টি তা নয়। ডিজিটাল টেকনোলজী ব্যবহার না করেই অনেক সময় সেবা সহজীকরণ করা যায়। ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে অনেক সেবা তাৎক্ষণিকভাবে প্রদান করা সম্ভব হয়।
সর্বোপরি সেবা সহজীকরণের মাধ্যমে নাগরিক সেবা বা সার্ভিসসমূহকে ডিজিটালাইজড করা হবে সে সমস্ত সেবা প্রদান পদ্ধতি টেকসই হবে। সাথে সাথে সেবা গ্রহীতা বা ভোক্তাদের সন্তুষ্টি বৃদ্ধি পাবে।