GRS-অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা
GRS-অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা

অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা বা GRS (Grievance Redress System) কী এবং কেন

একজন নাগরিক হিসেবে বিভিন্ন সেবা পেতে আমাদের প্রায়ই সরকারি সেবা প্রদানকারি প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। সেবাটি পেতে অনেক সময় নানা কারনে হয়রানির শিকার হতে হয়। এক্ষেত্রে সেবা প্রত্যাশী চাইলে অভিযোগ দাখিল করতে পারবে। আর সংশ্লিষ্ট দপ্তর এর ক্ষেত্রে অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থার আওতায় সে অভিযোগটি নিস্পত্তি করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।  যদি যদিও বর্তমানে প্রতিটি দপ্তর সঠিক সময়ে সঠিক ভাবে সেবাটি প্রদান করার চেষ্টা করছে। কেননা এখন জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা ইত্যাদি বিষয়াদি নিশ্চিত করার জন্য প্রতিষ্ঠানসমূহ নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করছে। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের সিটিজেন চার্টার অনুযায়ী গ্রাহক সেবা প্রদান করার জন্য বিভিন্ন রকম ডিজিটালাইজড সার্ভিস বাস্তবায়ন করেছে বা করছে। 

যে সমস্ত বিষয়াদি আলোচনা করা হয়েছে- 

অভিযোগ কী?

সহজ কথায় অভিযোগ হচ্ছে ই-মেইল, নির্ধারিত ফরমে বা হাতে লিখা দায়েরকৃত দরখাস্ত যার মাধ্যমে সেবা প্রত্যাশীদের বৈধ অধিকার হতে বঞ্চিত হওয়া বা হয়রানি বা বিধি-বহির্ভূত কর্মকান্ডের শিকার ইত্যাদি বিষয়াদির উপর আলোকপাত করা হয়।  সরকারি দপ্তর অথবা আইনের মাধ্যমে নিবন্ধিত সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রতিশ্রুত সেবা বা পণ্য যখন যথানিয়মে প্রদান করা না হয় তখনই অভিযোগের বিষয়টি উত্থাপন হতে পারে।

অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা বা GRS (Grievance Redress System) কী এবং কেন?

সরকারি প্রতিটি দপ্তরে বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে।  সেবা প্রত্যাশীগণ কাঙ্খিত মানের সেবা না পেলে বা কোন রকমের অহেতুক হয়রানির শিকার হলে অভিযোগ দাখিল করতে পারেন। সরকারি দপ্তর কর্তৃক অভিযোগটি আমলে নিয়ে সে আলোকে  প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে কাঙ্খিত সেবা প্রদানে ভবিষ্যতে অধিকতর অসন্তোষের সৃষ্টি হতে পারে। তাই অভিযোগটি আমলে নিয়ে যথাযথভাবে অভিযোগটি নিস্পত্তি করাই হলো অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা। বর্তমানে প্রতিটি দপ্তরে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির আওতাভূক্ত অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।  কতকগুলো অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে এবং তার মধ্যে কতগুলো নিস্পত্তি হয়েছে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন তৈরীর প্রয়োজন হয়। সর্বোপরি সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা বা GRS (Grievance Redress System) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

কেন অভিযোগ দাখিল করবেন?

নানাবিধ কারনে আপনি অভিযোগ দাখিল করতে পারেন। একজন নাগরিক হিসেবে জীবন ধারনে সরকার বা সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ হতে প্রয়োজনীয় সেবা পাওয়া একটি অধিকার। উক্ত নাগরিক অধিকার প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য অভিযোগ দাখিল এবং অভিযোগ নিস্পত্তি করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। 

 একজন নাগরিক হিসেবে রাস্ট্রের কোন সেবা পেতে আপনি যদি যে কোনভাবে সংক্ষুব্ধ হয়ে থাকেন তবে আপনি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ে অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন।

তবে কাউকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে অভিযোগ দাখিল না করাই উত্তম।

কিভাবে অভিযোগ দাখিল করবেন?

প্রচলিত নিয়মে আপনি নির্ধারিত ফরমে সরাসরি, ডাকযোগে বা ইমেইলে অভিযোগ দাখিল করতে পারেন। তাছাড়াও বর্তমানে যে কোন জায়গা থেকে অনলাইনে অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন।

 

অনলাইনে অভিযোগ দাখিল পদ্ধতি

অনলাইনে অভিযোগ দাখিল করতে নিম্নোক্ত বাটনে ক্লিক করুন। এটি একটি কেন্দ্রীয় অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থার অনলাইন প্ল্যাটফর্ম । সরকারি দপ্তর এবং আওতাধীন দপ্তর/সংস্থার প্রতিশ্রুত সেবা, সেবা প্রদান পদ্ধতি এবং সেবা অথবা পণ্যের মান সম্পর্কে আপনার অসন্তোষ বা মতামত এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানাতে পারেন। 

 

ওয়েবসাইটে প্রবেশের পর আপনি নিম্নোক্ত ইন্টারফেস দেখতে পারবেন। 

অভিযোগ ব্যবস্থাপনা
অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা

এখানে দু’টি পদ্ধতিতে অভিযোগ দাখিল করা যায়- একটি নাগরিক অভিযোগ আর একটি অজ্ঞাতনামা হিসেবে। নাগরিক অভিযোগ দাখিল করার জন্য প্রথমে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের জন্য নাম ঠিকানা, এনআইডি, মোবাইল নাম্বার ইত্যাদি তথ্যাদি ইনপুট দেয়ার প্রয়োজন পড়বে।পরবর্তীতে লগ-ইন করে নাগরিক অভিযোগ দাখিল করা যায়। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি সরকারি দপ্তর, পরিদপ্তর, সংস্থা, কোম্পানি এখানে কানেক্টেড রয়েছে। অভিযোগ দাখিলের জন্য সংশ্লিষ্ট অফিস বাছাই করার প্রয়োজন হবে।

অজ্ঞাতনামা হিসেবে দাখিলের জন্য হোমপেজের অভিযোগ দাখিল বাটন ব্যবহার করতে হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, অজ্ঞাতনামা হিসেবে দাখিলকৃত অভিযোগ আমলে নিতেও পারে আবার নাও নিতে পারে এবং এটি ট্র্যাক করা যাবে না। আর কাউকে হয়রানি করার জন্য অভিযোগ দাখিল করা হলে তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে।

অভিযোগের সর্বশেষ অবস্থা

নাগরিক অভিযোগ দাখিল করা হলে অভিযোগকারী আলোচ্য অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থার অনলাইন প্লাটফর্মে লগ-ইন করে সর্বশেষ গৃহীত অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারবে। এক্ষে্ত্রে অভিযোগ দাখিল করার সময় যে ট্র্যাকিং নাম্বারটি পাওয়া যাবে সেটি ব্যবহার করতে হবে। ট্র্যাকিং নাম্বার ব্যবহার করে  অভিযোগের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট অফিস কর্তৃক কি কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে ইত্যাদি বিষয় জানতে পারবে। 

অভিযোগ নিস্পত্তি

অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থার অনলাইন প্লাটফর্মে যখন কোন অভিযোগ দাখিল করা হয় সেটি সংশ্লিষ্ট অফিসের জন্য মনোনিত অভিযোগ নিস্পত্তি কর্মকর্তা বরাবর প্রেরণ করা হয়। অভিযোগ নিস্পত্তি কর্মকর্তা অভিযোগটি সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্ট-এ প্রেরণ করে। সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক অভিযোগের আলোকে প্রয়োজনীয় কার্যাদি সম্পন্ন করে অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থার ওয়েবসাইটে তা আপলোড করা হয়। পরে সেটি আবার অভিযোগ নিস্পত্তি কর্মকর্তার নিকট আসে এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে অভিযোগটি নিস্পত্তি করা হয়। অভিযোগ নিস্পত্তির বিষয়টি স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসএমএস এবং ই-মেইলে অভিযোগকারীকে অবহিত করা হয়। একটি অভিযোগ ৬০ দিনের মধ্যে নিস্পত্তির বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

আপিল

অভিযোগ নিস্পত্তি কর্মকর্তা কর্তৃক গৃহীত কার্যক্রম নিয়ে যদি অভিযোগ কারী সন্তুষ্ট না হয় তাহলে সে আপিল করতে পারবে।  অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থার ওয়েবসাইটে লগ-ইন করে আপিল করা হলে আপিলটি সংশ্লিষ্ট আপিল কর্মকর্তার নিকট চলে যায়। আপিল নিস্পত্তির সময়সীমা ৩০ দিন।

উপসংহার

সরকারি দপ্তরসমূহে জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ। সেবা প্রত্যাশীদের নির্বিঘ্নে সেবা প্রদান করার মাধ্যমে প্রতিটি দপ্তর হয়ে উঠুক প্রতিটি নাগরিকের আস্থার জায়গা। এর মধ্যেই নিহিত আছে অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থার প্রকৃত সার্থকতা। 

Leave a Reply